আমন ধান :
এ মাসে অনেকের আমন ধান পেকে যাবে তাই রোদলা দিন দেখে ধান কাটতে হবে। আগামী মৌসুমের জন্য বীজ রাখতে চাইলে প্রথমেই সুস্থ সবল ভালো ফলন দেখে ফসল নির্বাচন করতে হবে। এরপর কেটে, মাড়াই ঝাড়াই করার পর রোদে ভালোমত শুকাতে হবে। শুকানো গরম ধান আবার ঝেড়ে পরিস্কার করতে হবে এবং ছায়ায় রেখে ঠান্ডা করতে হবে। পরিস্কার ঠান্ডা ধান বায়ুরোধী পাত্রে সংরক্ষণ করতে হবে। বীজ রাখার পাত্রটিকে মাটি বা মেঝের ওপর না রেখে পাটাতনের উপর রাখতে হবে। পোকার উপদ্রব থেকে রেহাই পেতে হলে ধানের সাথে নিম, নিসিন্দা, ল্যান্টানার পাতা শুকিয়ে গুড়া করে মিশিয়ে দিতে হবে।
বোরো ধান : অগ্রহায়ণ মাস বোরো ধানের বীজতলা তৈরির উপযুক্ত সময়। রোদ পড়ে এমন উর্বর ও সেচ সুবিধা যুক্ত জমি বীজতলার জন্য নির্বাচন করতে হবে। চাষের আগে প্রতি বর্গমিটার জায়গার জন্য ২-৩ কেজি জৈব সার দিয়ে ভালোভাবে জমি তৈরি করতে হবে। পানি দিয়ে জমি থকথকে কাদা করে এক মিটার চওড়া এবং জমির দৈর্ঘ্য অনুসারে লম্বা করে ভেজা বীজতলা তৈরি করতে হবে। যেসব এলাকায় ঠান্ডার প্রকোপ বেশি সেখানে শুকনো বীজতলা তৈরি করতে পারেন।
যেসব এলাকায় সেচের পানির ঘাটতি থাকে সেখানে আগাম জাত হিসেবে ব্রিধান-২৮,৪৫ এবং ৫৫, উর্বর জমি ও পানি ঘাটতি নেই এমন এলাকায় ব্রিধান-২৯, ৫০, ৫৮, ৫৯, ৬০ চাষ করা যেতে পারে। ঠান্ডা প্রকোপ এলাকায় ব্রিধান-৩৬, হাওর এলাকায় বিআর- ১৭, ১৮, ১৯, লবনাক্ত এলাকায় ব্রিধান-৪৭, ৫৫, ৬১ চাষ করতে পারেন। বীজ বপন করার আগে ৬০-৭০ ঘন্টা জাগ দিয়ে রাখতে হবে। এ সময় ধানের অংকুর গজাবে। অংকুরিত বীজ বীজতলায় ছিটিয়ে বপন করতে হবে। প্রতি বর্গমিটার বীজতলার জন্য ৮০ থেকে ১০০ গ্রাম বীজের প্রয়োজন হয়।
গম :
পুরো অগ্রহায়ন মান গম বীজ বপনের উপযুক্ত সময়। এরপর গম যত দেরীতে বপন করা হবে ফলনও সে হারে কমে যাবে। দোআশ মাটিতে গম ভালো হয়। অধিক ফলনের জন্য গমের আধুনিক জাত যেমন- আনন্দ, বরকত কাঞ্চন, সৌরভ, গেšরব, শতাব্দী, সুফী, বিজয়, বারি গম-২৭, বারি গম-২৮, রোপন করতে হবে। বীজ বপনের আগে অনুমোদিত ছত্রাকনাশক দিয়ে বীজ শোধন করে নিতে হবে। সেচযুক্ত চাষের জন্য বিঘা প্রতি ১৬ কেজি এবং সেচবিহীন চাষের জন্য বিঘা প্রতি ১৩ কেজি বীজ বপন করতে হবে। গমের ভালো ফলন পেতে হলে প্রতি শতক জমিতে ৩০-৪০ কেজি জৈবসার, ৬০০-৭০০ গ্রাম ইউরিয়া, ৬০০-৭০০ গ্রাম টিএসপি, ৩০০-৪০০ গ্রাম এমওপি, ৪০০-৫০০ গ্রাম জিপসাম সার প্রয়োগ করতে হবে।
ভুট্টা :
ভুট্টা গত মাসে আবাদ করে না থাকলে এ মাসের ১৫ তারিখের মধ্যে জমি তৈরি করে বীজ বপন করতে হবে। ১ হেক্টর জমিতে বীজ বপনের জন্য ২৫-৩০ কেজি ভুট্টা বীজের প্রয়োজন হয়। তবে খই বুট্টা বা হাইব্রিডের ক্ষেত্রে বীজের মাত্রা এর অর্ধেক হবে। ভালো ফলনের জন্য সারিতে র বীজ বপন করতে হবে। এক্ষেত্রে সারি থেকে সারির দূরত্ব ৭৫ সেমি. এবং বীজ থেকে বীজের দূরত্ব ২৫ সেমি. রাখতে হবে। সাধারনত প্রতি শতক জমিতে ১-১.৫ কেজি ইউরিয়া, ৭০০-৯০০ গ্রাম টিএসপি, ৪০০-৬০০ গ্রাম এমওপি, ৬০০-৭০০ গ্রাম জিপসাম, ৪০-৬০ গ্রাম দস্তা,২০-৩- গ্রাম বরিক এসিড এবং ১৬-২০ কেজি জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে।
আলু :
রোপনকৃত আলুর যতœ নিতে হবে। মাটির কেইল বেধে দিতে হবে এবং কেইলে মাটি তুলে দিতে হবে। সারের উপরিপ্রয়োগসহ প্রয়োজনীয় সেচ দিয়ে আগাছা পরিস্কার করতে হবে।
ডাল ফসল :
ডাল একটি উৎকৃষ্ট আমিষ জাতীয় খাবার। মাঠে এখন মুসুর, মুগ, মাসকলাই, খেসারি, ফেলন, অড়হর, সয়াবিন, ছোলা, ফেলন সহ অন্যান্য ডাল ফসল আছে। সারের উপরিপ্রয়োগ, প্রয়োজনে সেচ, আগাছা পরিস্কার, বালাই ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য পরিচর্যা সময়মত করতে হবে।
শাকসবজি :
মাঠে এখন অনেক শাক সবজি বাড়ন্ত পর্যায়ে আছে। ফুলকপি, বাধাকপি, ওলকপি, শালগম, টমেটো, বেগুন এসব বড় হওয়ার সংগে সংগে চারার গোড়ায় মাটি তুলে দিতে হবে। চারার বয়স ২-৩ সপ্তাহ হলে সারের উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। সবজি ক্ষেতের আগাছা পরিস্কার, বালাই ব্যবস্থাপনাসহ অন্যান্য পরিচর্যা সময়মত করতে হবে। এক্ষেত্রে সেক্স ফেরোমন ফাদ ব্যবহার করতে পারেন। টমেটো গাছের অতিরিক্ত ডাল ঙেঙ্গে দিয়ে খুটির সাথে বেধে দিতে হবে।
প্রাণি সম্পদঃ
হাস মুরগীর ডিম থেকে বাচ্চা ফুটানোর ভালো সময় এখন। তাছাড়া সামনে শীতকাল আসছে। শীতকালে পোলট্রিতে রোগ বালাইয়ের আক্রমন বেড়ে যায় এবং রানীক্ষেত, মাইকোপ্লাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, বসন্ত রোগ, কলেরা এসব রোগ মহামারী আকারে দেখা দিতে পারে। এসব রোগ থেকে হাস মুরগীকে বাচাতে হলে এ মাসেই টিকা দিতে হবে। এ সময় গবাদি পশুর ক্ষুরা রোগ, তড়কা, গলাফুলা রোগ দেখা দিতে পারে। গবাদি পশুর রোগ দেখা দিলে সাথে সাথে প্রানি চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করে ব্যবস্থা নিতে হবে।
মৎস্য সম্পদ :
মাছের খাবার হিসেবে উদ্ভিদ খাদ্য এবং প্রাণিজ খাদ্য তৈরিতে গোবর বা আবর্জনা পচা সার, রাসায়নিক সার বেশি উপযোগী। এ সব সার পরিমানমতো প্রয়োগ করতে হবে। জাল টেনে মাছের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে হবে। প্রয়োজনে মৎস্যবিদদের সাথে পরামর্শ করে চুন বা তুতে প্রয়োগ করতে পারেন। শীতকাল আসছে। পুকুরে রোদ পড়া নিশ্চিত করতে পুরুর পাড়ের গাছের ডালপালা কেটে পরিস্কার করতে হবে।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS