Wellcome to National Portal
Main Comtent Skiped

Title
Giant mili Bug
Details

বর্তমানে পার্বত্য অঞ্চলে প্রচুর পরিমানে আম ও কাঠালের বাগান সৃষ্টি হয়েছে। দিন দিন এর সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। আম কাঠালে বিভিন্ন পোকা মাকড়ের আক্রমন পরিলক্ষিত হয়। ইদানিং বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে ছাতরা পোকার আক্রমন পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং বাগানের বেশ ক্ষতি করছে। বিভিন্ন ফলগাছে, সবজি, বাহারি গাছ, কাঠের গাছে এদের বিচরণ দেখা যায়। এরা রাক্ষসেরমত গাছের কচি অংশের রস চুষে খায় বলে এদের রাক্ষুসে ছাতরা পোকা বলে। ২০০৩ সালে প্রথম এ পোকার উপস্থিতি বাংলাদেশে শনাক্ত হয়। ২০১১ সালে এক জরিপে পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও ও দিনাজপুরে এ পোকা আক্রমণ লক্ষ্য করা যায়। ইংরেজিতে এ পোকা জায়ান্ট মিলি বাগ নামে পরিচিত। এ পোকা শুধু আম কাঁঠাল গাছেই নয়, অন্যান্য আরও অন্তত ৬২ রকম গাছে আক্রমণ করে। আম-কাঁঠাল ছাড়াও এ দেশে পেয়ারা, পেঁপে, লেবু, বট, শিমুল, শিরিষ, নারিকেল, মেহগিনি, তেঁতুল ইত্যাদি গাছে এ পোকা আক্রমণ করে থাকে। ধীরে ধীরে এ পোকা দেশের অন্যান্য অঞ্চলেও ছড়িয়ে পড়ছে। হঠাৎ করে এ পোকাদের দেখলে কিছুটা ভয় লাগে। কেননা, এসব পোাকারে দেখতে বেশ বড় আর আক্রান্ত অংশে এরা গাদাগদি করে থাকে। সাদা রঙের চ্যাপ্টা ডিম্বাকার পোকাদের কাছে গেলে বা বিরক্ত করলে ওরা বেয়ে বেয়ে অন্যত্র ছড়িয়ে পড়ে এবং নতুন করে আক্রমণ শুরু করে। ওদের গায়ের উপার সাদা রঙের এক ধরণের মোমের  গুঁড়ো থাকে ।

পোকার বর্ণনা ঃ এর বাচ্চা বা নিম্ফ দেখতে ডিম্বাকার, চ্যাপ্টা এবং দেহ সাদা পাউডার দ্বারা আকৃত থাকে। পুরুষ পোকার একজোড়া কালো পাখা আছে। স্ত্রী পোকা ডিম্বাকার ও চ্যাপ্টা, হালকা বাদামি রঙের,  দেহের উপর মোমের মতো সাদা গুড়োর আবরণ থাকে। স্ত্রী পোকাদের কোনো পাখা নেই। স্ত্রী পোকা আকারে বেশ বড়। এজন্য এদের বড় ছাতরা পোকা বা রাক্ষুসে ছাতরা পোকা বলে।

 

ক্ষতির লক্ষণঃ  জানুয়ারি থেকে মার্চ মাসে এদের বেশি দেখা যায়।  এ সময়ে কচি আম আর মুচি কাঁঠাল গাছে থাকে। এগুলো এদের দ্বারা কখানো কখনো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এপ্রিলের পর থকে আক্রমন কমতে থাকে। আগস্ট থেকে ডিসেম্বরে কোনো রাক্ষুসে ছাতরা পোকাকে আর দেখা যায় না। এরা তখন লুকিয়ে পড়ে। আমের মুকুল আসার সময় বা কাঁঠারের মুচি ধরার সময় এরা সাধারণত গাছে ওঠে এবং দলে দলে মুকুল ও মুচি আক্রমণ করে সেখান থেকে রস চুষে খেতে থাকে। ফলে সেসব মুকুল বা মুচির ক্ষতি হয় এবং শুকিয়ে ঝরে যায়। পোকারা শুধু মুকুল বা কচি ফলই নয়, কচি  ডগাও আক্রমণ করে। কচি ফলের সাধারণ বোঁটার কাছে ওরা আক্রমণ করে। বড় ছাতরা পোকারা দলে দলে বাড়ন্ত ডগা, মুকুল, কচি ফলের বোঁটা,  কচি ডগা ইত্যাদি থেকে রস চুষে খায়। এতে সেসব অংশ শুকিয়ে যায় এবং আক্রান্ত ডগা বা ডালে কোনো ফল ধরে না। আর ফল ধরলেও সেসব ফল হয় খুব দুর্বল, সামান্য বাতাসেই কচি ফল ঝরে পড়ে। আক্রান্ত অংশে এরা এমনভাবে গাদাগাদি করে থাকে যে আক্রান্ত অংশের ডগা বা বোঁটা সহজে দেখাই যায় না। এরা এক ধরনের মধুর মতো মিস্টি রস ছাড়ে। ফোঁটায় ফোঁটায় এদের দেহ থেকে সে রস নিচে পড়তে  থাকে। এই মধুরস পাতা, কান্ড ইত্যাদি জায়গায় পড়ে শুকিয়ে সেখানে চটচটে আঠার মতো হয়ে যায় এবং সেখানে শুটি মোল্ড নামে এক ধরনের কালো ছত্রাকের জন্ম হয়। পাতা কালো হয়ে যায় বলে গাছের স্বাভাবিক খাদ্য তৈরি এতে বাধাগ্রস্ত হয়। ফলে আক্রান্ত গাছ দুর্বল হয়ে পড়ে ও ফলন কমে যায়।

সমন্বিত দমন ব্যবস্থাপনাঃ এ পোকা নিয়ন্ত্রণের সবচেয়ে সহজ পদ্ধতি হলো, পোকাসহ আক্রান্ত অংশ সংগ্রহ করে পোকাগুলো পিটিয়ে মেরে ফেলা। অল্প কয়েকটা গাছে আক্রমণ হলে এ পদ্ধতিতে ভালো ফল পাওয়া যেতে পারে।

বাগানের জন্মানো আগাছা ও অন্যান্য পোষক গাছ তুলে বাগান পরিষ্কার রাখতে হবে। গ্রীষ্মকালে বাগান ভালো করে চাষ দিতে হবে যাতে মাটির নিচে থাকা ডিম উপরো উঠে আসে এবং পাখিরা সেগুলো খেয়ে ফেলতে পারে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসের দিকে গাছের গোড়ায় মাটি থেকে ১ মিটার উঁচুতে ২০-২৫ সেন্টিমিটার চওড়া প্লাস্টিকের ফিতা বা রঙ করা মসৃণ টিন দিয়ে চারদিকে আবৃত করে দিলে এরা বারবার গাছে ওঠার চেষ্টা করে ব্যর্থ হবে। ফলে গাছে এ পোকার আক্রমণ কম হবে অথবা হবে না। গাছ বেয়ে উপরে ওঠার সময় যেসব পোকা গড়িয়ে নিচে পড়ে যাবে সেগুলো পিটিয়ে মেরে ফেলতে হবে। প্লাস্টিক ফিতা বা টিনের পাতের বদলে আলকাতরা প্রলেপ দিয়েও এদের গাছে ওঠা প্রতিহত করা যায়। সে ক্ষেত্রে মাটি থেকে ১ মিটার উপরে গাছের গোড়ার চারদিকে ১৫ সেন্টিমিটার চওড়া করে আলকাতরার প্রলপ দিতে হবে। আলকাতরার প্রলেপ শুকিয়ে গেলে সেখানে আবার আলকাতরা লাগাতে হবে। আক্রমণপ্রবণ এলাকা, বিশেষ করে যেসব এলাকায় ও গাছে এ পোকার আক্রমণ দেখা দিয়েছে সে এলাকায় আগামী বছর থেকে এ কাজ করা খুব জরুরি। আক্রান্ত হওয়ার পর সেসব গাছ থেকে পোকারা যখন নামতে শুরু করে বা কীটনাশক স্প্রে করলে বিরক্ত হয়ে পালাতে চেষ্টা করে তখন গাছের পোড়ায় পুরু পলিথিন পেচিয়ে তার নিছের দিকটা রশি দিয়ে গাছের সাথে বেঁধে রাখতে হবে। উপরের মুখ খোলা ও ফাঁক করা থাকবে, অনেকটা কাপের মতো। গাছ থেকে পোকারা নামার সময় গোড়ায় বাঁধা এই পলিথিনের ফাঁদে এস জমা হবে। তখন সেগুলো সংগ্রহ করে মেরে ফেলতে হবে। মাটিতে পুত্তলি অবস্থায় যাওয়ার আগেই এ কাজ করতে পারলে পরের বছর এ পোকার বংশ অনেক কমে যাবে ও আক্রমণের সম্ভাবনা থাকবে না।

এরপরও যদি কোনো ছাতরা পোকা গাছের গোড়া বেয়ে উপরে উঠে যায় সে ক্ষেত্রে আক্তান্ত অংশে অনুমোদিত কীটনাশক স্প্রে করতে হবে। এক্ষেত্রে কার্বারিল জাতীয় যে কোনো কীটনাশক যেমন সেভিন ৮৫ ডিব্লিউপি বা কার্বারিল ৮৫ ডব্লিউপি প্রতি ১০ লিটার পানিতে ২০ মিলিলিটার মিশিয়ে স্প্রে করতে হবে। এ ছাড়া কুইনালফস জাতীয় কীটনাশক যেমন করলাক্স ২৫ ইসি, দেবিকুইন ২৫ ইসি একই মাত্রায় পানিতে গুলে স্প্রে করতে হবে। প্রতি ১০ লিটার পানিতে ৫ মিলি লিটার এডমায়ার ২০০ এসএল কীটনাশক মিশিয়ে আক্রান্ত ফল, মুকুল বা ডগায় স্প্রে করে এ পোকা নিয়ন্ত্রণ করা যায়। এক্ষেত্রে আক্রান্ত অংশে ১৫ দিন পরপর ২ বার স্প্রে করতে হবে।

Attachments
Publish Date
12/03/2019
Archieve Date
29/06/2019