বোরো ধান:
এ সময় বোরো ধানের বীজতলার পরিচর্যা করতে হবে। আগাছা ও পাখির আক্রমন কমানোর জন্য বীজ গজানোর ৪-৫ দিন পর বেডের ওপর ২-৩ সেন্টিমিটার পানি রাখতে হবে। বীজতলায় চারা হলুদ হয়ে গেলে প্রতি বর্গমিটারে ৭ গ্রাম ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। এরপরও যদি চারা সবুজ না হয় তবে প্রতি বর্গমিটারে ১০ গ্রাম করে জিপসাম দিতে হবে। মুল জমি ভালোভাবে চাষ ও মই দিয়ে পানিসহ কাদা করতে হবে। জমিতে পয©vপ্ত জৈব সার এবং শেষ চাষের আগে ইউরিয়া ছাড়া অন্যান্য সার দিতে হবে। বোরো ধানের চারার বয়স ৩০-৪০ দিন হলে মুল জমিতে রোপন করতে পারেন। সেক্ষেত্রে লাইন থেকে লাইনের দূরত্ব ২৫ সেন্টি মিটার এবং গোছা থেকে গোছার দূরত্ব ১৫ সেন্টি মিটার বজায় রেখে প্রতি গোছায় ২-৩টি সুস্থ চারা রোপন করলে ফলন ভালো হয়। ধানের চারা রোপনের ১৫-২০ দিন পর প্রথম কিস্তি, ৩০-৪০ দিন পর দ্বিতীয় কিস্তি এবং ৫০-৫৫ দিন পর শেষ কিস্তি হিসেবে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে।
ভুট্টা:
এ মাসে ভুট্টা গাছের গোড়ার মাটি তুলে দিতে হবে। গোড়ার মাটির সংগে ইউরিয়া সার ভালোভাবে মিশিয়ে দিতে হবে এরপর সেচ দিতে হবে। গাছের নিচের দিকের মরা পাতা ভেংগে দিতে হবে। আর ভুট্টার জমিতে কোন সাথি ফসল বা মিশ্র ফসল চাষ করে থাকলে সেগুলোর প্রয়োজনীয় পরিচযv© করতে হবে।
আলু:
চারা গাছের উচ্চতা ১০-১৫ সেন্টি মিটার হলে ইউরিয়া সার উপরিপ্রয়োগ করতে হবে। দুই সারির মাঝে সার দিয়ে কোদালের সাহায্যে মাটি কুপিয়ে সারির মাঝের একটি গাছের গোড়ায় তুলে দিতে হবে। ১০-১২ দিন পর পর এভাবে গাছের গোড়ায় মাটি তুলে না দিলে গাছ হেলে পড়বে এবং ফলন কমে যাবে। এ সময় আলুর নাবি ধসা রোগ দেখা দিতে পারে। এ রোগ দেখা দিলে দেরি না করে ২ গ্রাম ডায়থেন এম-৪৫ অথবা সিকিউর অথবা ইন্দোফিল প্রতি লিটার পানির সংগে মিশিয়ে ৭ দিন পরপর স্প্রে করতে হবে। এ রোগের কারনে মড়ক লাগা জমিতে সেচ দেয়া বন্ধ রাখতে হবে। আলু গাছের বয়স ৯০ দিন হলে মাটির সমান করে গাছ কেটে দিতে হবে এবং ১০ দিন পর আলু তুলে ফেলতে হবে।
তুলা:
এ মাসে তুলা সংগ্রহের কাজ শুরু করতে হবে। তুলা সাধারনত তিন পয©vয়ে সংগ্রহ করা হয়ে থাকে। শুরুতে ৫০% বোল ফাটলে প্রথমবার, বাকি ফলের ৩০% পরিপক্ক হলে দ্বিতীয়বার এবং অবশিষ্ট ফসল পরিপক্ক হলে শেষ অংশের তুলা সংগ্রহ করতে হবে। আর রোদময় শুকনা দিনে বীজ তুলা উঠাতে হবে। ভালো তুলা আলাদাভাবে তুলে ৩-৪ বার রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ করতে হবে।
ডাল ও তেল ফসল:
মসুর, ছোলা, মটর, মাসকলাই, সরিষা, তিসি পাকার সময় এখন। সরিষা, তিসি বেশি পাকলে রোদের তাপে ফেটে গিয়ে বীজ পড়ে যেতে পারে, তাই এগুলো ৮০ ভাগ পাকলেই সকাল বেলা সংগ্রহের ব্যবস্থা নিতে হবে। ডাল ফসলের ক্ষেত্রে ফসল সংগ্রহের সময় হলে গাছ গোড়াসহ না উঠিয়ে মাটি থেকে কয়েক ইঞ্চি রেখে সংগ্রহ করতে হবে। এতে জমিতে উব©রতা এবং নাইট্রোজেন সরবরাহ বাড়বে।
শাকসবজি:
এ সময় ক্ষেতের শাক সবজির পরিচপয©v করতে হবে। টমেটোতে ফল ছিদ্রকারী পোকার আক্রমন দেখা দিতে পারে। প্রতি বিঘা জমির জন্য ১৫ টি ফেরোমন ফuvদ স্থাপন করে এ পোকা সহজেই দমন করা যেতে পারে। আর আক্রমন বেশী হলে কুইনালফস গ্রুপের দেবিকুইন ২৫ ইসি অথবা কিনালা· ২৫ ইসি অথবা করোলা· ২৫ ইসি প্রতি লিটার পানিতে ১ মিলিলিটার পরিমান মিশিয়ে স্প্রে করে এ পোকা দমন করা যায়। টমেটো সংগ্রহ করে বাসায় সংরক্ষণ করার জন্য আধা পাকা টমেটোসহ গাছ তুলে ঘরের ঠান্ডা জায়গায় উপুড় করে ঝুলিয়ে টমেটোগুলোকে পাতলা কাপড় দিয়ে ঢেকে রাখতে হবে। পরবwর্ততে ৩-৪ মাস পর্যন্ত অনায়াসে এ টমেটো ব্যবহার করা যাবে।
প্রানি সম্পদ :
শীতকালে পোল্ট্রিতে অপুষ্টি, রানীক্ষেত, মাইকোপাজমোসিস, ফাউল টাইফয়েড, পেটে পানি জমা এসব রোগ দেখা দিতে পারে। মোরগ-মুরগীর অপুষ্টি জনিত সমস্যা সমাধানে খাবারের সাথে ভিটামিন এ, সি, ডি, ই, কে ও ফলিক এসিড সরবরাহ করতে হবে। শীতের তীব্রতা বেশি হলে পোল্ট্রি শেডে অবশ্যই মোটা চটের পর্দা লাগাতে হবে এবং বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে। শীতকালে ছাগলের নিউমোনিয়া রোগটি বেশি হয়। যদি ৫ দিনের বেশি কাশি ও দুর্গন্ধযুক্ত পায়খানা হয় তবে বুঝতে হবে প্যারাসাইটের জন্য নিউমোনিয়া হয়েছে। নিউমোনিয়াতে সেফটিয়া·ন ও টাইলোসিন ব্যবহারে খুব ভালো ফলাফল পাওয়া যায়। এছাড়া পেনিসিলিন, অ্যামপিসিলিন, অ্যামো·সিলিন, টেট্রাসাইক্লিন, স্টেপটোমাইসিন ব্যাবহারেও ভালো ফল পাওয়া যায়।
মৎস্য সম্পদ:
শীতকালে মাছের বিশেষ যত্ন নেয়া দরকার। কারন এ সময় পুকুরে পানি কমে যায়। পানি দুষিত হয়। মাছের রোগ বালাইও বেড়ে যায়। শীতের সময় কার্প ও শিং জাতীয় মাছে ড্রপসি বা পেট ফোলা রোগ বেশি হয়। এ রোগের প্রতিকারে প্রতি কেজি খাদ্যের সাথে ১০০ মিলিগ্রাম টেরামাইসিন বা স্টেপটোমাইসিন পরপর ৭ দিন খাওয়াতে হবে। এ বিষয়ে আপনার কাছের উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তার সাথে যোগাযোগ করে সিদ্ধান্ত নিলে সবচেয়ে ভালো হয়।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS