ডেঙ্গু জ্বরের ভয়াবহতা দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। তাতে করে জন সাধারণের মনে ভয় জাগছে। আর নির্দিষ্ট কোন প্রতিষেধক আবিস্কৃত না হওয়ায় চিকিৎসকরাও হিমসিম খাচ্ছে। প্রতিদিন প্রায় ৪শ থেকে ৫শ মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। চলমান বছরে ( জুলাই, ২০১৯) এই রোগের রোগীর সংখ্যা দশ হাজারেরও বেশি এবং মৃতের সংখ্যা প্রায় ১০ থেকে ১২ জন। এই রোগের সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপুর্ন হল শিশুরা। তবে আগের থেকে এই রোগের লক্ষণে অনেক ভিন্নতা দেখা যাচ্ছে। সাথে সাথে এর প্রার্দূভাবের সময়কালেও বেশ পার্থক্য আছে। সাধারণত আগষ্ট ও সেপ্টেম্বর মাসে এ রোগের প্রার্দূভাব বেশি থাকলেও এবছর মে মাস থেকেই রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। ডেঙ্গু জ্বরে যে কোন অঙ্গে ব্যথা, রক্তপাতসহ আরো অনেক লক্ষণ দেখা যায় এবং রোগীর শরীরে যে কোন একটি লক্ষণ প্রকাশ পায়। বর্তমানে এ রোগীর শরীরে একাধিক লক্ষণ একত্রে প্রকাশ পাচ্ছে এবং একত্রে অনেক অঙ্গ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। তাতে করে সাধারণ মানুষ আতঙ্কিত হচ্ছে। বাংলাদেশে ২০০০ সালে প্রথম ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত রোগী চিহ্নিত করা হয় এবং সেই বছর এ রোগে মৃত্যু হয় ৯৩ জনের, পরবর্তীতে ২০০৩ সালের এ রোগীর সংখ্যা কমতে কমতে শূণ্যের কোটায় নেমে এসেছিল। কিন্তু গত বছর (২০১৮ সাল) আবার হঠাৎ ই ডেঙ্গু রোগীর সংখ্যা প্রায় দশ হাজারেরও বেশি হয়ে থাকে মৃত প্রায় ২৬ জন। এই বছরও এ রোগের বেশ প্রকোপ দেখা যাচ্ছে। ডেঙ্গু জ্বরের ভাইরাসের প্রধান বাহক হল স্ত্রী এডিস মশা (Aedes aegypti )। তবে এ মশাটি শুধু ডেঙ্গু নয় তাছাড়া চিকনগুনিয়া, জিকা ও ইবোলো ভাইরাসেরও বাহক। এই জ্বরে চার ধরনের DENV-1, DENV-2, DENV-3, DENV-4 এই জ্বরের ভিন্নতার কারনেই এই রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কার বেশ কঠিন হয়ে পড়েছে। বর্তমান এ পরিস্থিতিতে আমাদের করণীয় শুধু সচেতনতা বৃদ্ধিই নয় বরং আধুনিক চিকিৎসার সাথে তাল মিলিয়ে আমাদের ভেজষ উদ্ভিদের ব্যবহারকে প্রাধান্য দিতে হবে। কারণ এসব উদ্ভিদের ব্যবহার যেমন পরিবেশ বান্ধব তেমনি মানব শরীর এন্টিবায়োটিকের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে মুক্ত থাকবে। এখন বিশ্বের বিভিন দেশে শুধু ডেঙ্গু জ্বর নয় বিভিন রোগের চিকিৎসায় হারবাল বা ভেজষ চিকিৎসা বেশ জনপ্রিয়তা ও গুরুপ্ত পাচ্ছে। ডেঙ্গু জ্বর বিশ্বের একশরও বেশি দেশে দেশে ছড়িয়ে পড়েছে এবং এসব দেশের মানুষ নানা ধরনের ভেজষ উদ্ভিদের ব্যবহার করে আসছে। তাই এসব উদ্ভিদের সর্ম্পকে জানা উচিত, তাতে আমাদের সচেতনতা বৃদ্ধি পাবে আর হাজারও মানুষের প্রাণ বাঁচানো সহজ হবে।
১. পেঁপে (Carica papaya) :- ডেঙ্গু জ¦রের প্রাথমিক চিকিৎসায় পেঁপে পাতার রস খুবই কার্যকরী। পেঁপে পাতার রস পান করলে ২৪ ঘন্টার মধ্যে মানব শরীরে রক্তে প্লাটিলেটের পরিমাণ বেড়ে যায় যা গবেষণা দ্বারা প্রমাণিত হয়েছে।
২. পেয়ারা (Psidium guajaya) :- ভারতের বিভিন্ন গ্রামে পেয়ারা পাতার রস ডেঙ্গু জ্বর নিয়নত্রণে খুবই জনপ্রিয়। এটি দেহের রক্তে প্লাটিলেট বৃদ্ধি করে।
৩. তুলসী( Ocimum sanctum) :- তুলসীতে ভাইরাস প্রতিরোধী গুনাগুন থাকায় তুলসীর চা ডেঙ্গু জ্বরে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়। তাছাড়া তুলসীর তেল এডিস মশার লার্ভা বা ডিম্বক দমনে বেশ কার্যকর। তুলসী ডেঙ্গু-১ এর উপর কার্যকর।
৪. নিম (Azidarachta indica) :- ডেঙ্গু ভাইরাস-২ এর জন্য নিম পাতার রস বেশ কার্যকরী। নিমে ভাইরাসের প্রতিরোধী গুন থাকায় এর থেকে ডেঙ্গুর প্রতিষেধক আবিষ্কারের সম্ভাবনা রয়েছে। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে নিমের পাতা ও পেঁপে পাতার রসের মিশ্রণ ডেঙ্গু জ্বরে ব্যাপকভাবে ব্যবহার হয়।
৫. করলা (Momordica charanatia) :- করলা শুধু ডায়বেটিস রোগে নয় ডেঙ্গু-১ এর জন্য বেশ কার্যকরী।
৬. লেমন ঘাস (Cymbopogon citratus) :- লেমন ঘাসেরশুকনা পাতার চা ডেঙ্গু-১ এর জন্য এর উপর বেশ কাজ করে। এটি খাদ্যের স্বাদ ও গন্ধ বৃদ্ধি করার সাথে সাথে ভাইরাস প্রতিরোধী গুনাগুন আছে।
৭. চাইনিজ আদা (Boesenbergia rotunda) :- ঔষধী গুনাগুনের সাথে চাইনিজ আদার ক্ষত নিরাময়ের একটি দারুন গুন আছে। এই আদার রস ডেঙ্গু-২ এর দমনে বেশ ভাল কাজ করে।
৮. Asthma plant (Euphorbia hirta) :- এই আগাছাটি ডেঙ্গু-৩ প্রতিরোধে কার্যকরী। ফিলিপাইনে ডেঙ্গু রোগীদের এ গাছের পাতা সিদ্ধ করে তা চা হিসেবে খাওয়ানো হয়।
এ আলোচনার সাফেক্ষে একথা স্পষ্ট যে, আমাদের পরিচিত গাছগুলো দ্বারা আমরা ডেঙ্গু জ্বরের মোকাবেলা করতে পারি। তবে এসব ছাড়াও আরো অনেক প্রজাতির ভেজষ উদ্ভিদ ডেঙ্গু জ্বরে প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহার হচ্ছে। এ বিষয়ে আরো গবেষনা করা হলে বানিজ্যিকভাবে এসব উদ্ভিদের চাষ বাড়ানো সম্ভব হবে। এতে করে ডেঙ্গু জ্বরের প্রতিষেধক আবিষ্কারও সহজ হবে। আর ডেঙ্গু জ্বর সফলভাবে মোকাবেলা করা যাবে বলে আশা করা যায়।
কৃষিবিদ ফারহানা শাহ্রিন
বিএসসি (এজি), এমএস (হর্টিকালচার)
রাজস্থলী, রাঙ্গামাটি।
Planning and Implementation: Cabinet Division, A2I, BCC, DoICT and BASIS