গত ৩০-১১-২০১৯ ইং তারিখে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাঙ্গামাটি অঞ্চল এবং এফএও এর আয়োজনে রাঙ্গামাটি জেলা পরিষদ সম্মেলন কক্ষে দিনব্যাপি ‘জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৮ বাস্তবায়নে কর্মপরিকল্পনা প্রনয়ণে স্টেকহোল্ডারদের সাথে মতবিনিময়’ বিষয়ে আঞ্চলিক কর্মশালা অনুষ্ঠিত হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাঙ্গামাটি অঞ্চলের ভারপ্রাপ্ত অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবিদ মো. নাসিম হায়দারের সভাপতিত্বে কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব(পিপিসি) ড. মো. আবদুর রৌফ। কর্মশালায় বিশেষ অতিথি হিসাবে উপস্থিত ছিলেন কৃষি মন্ত্রনালয়ের অতিরিক্ত সচিব (পিপিবি) মো. রুহুল আমিন তালুকদার, এফএও এর কনসালটেন্ট এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রাক্তন মহাপরিচালক কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান, এফএও এর কনসালটেন্ট প্রফেসর রেজাউল করিম তালুকদার এবং অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) এস এম শফি কামাল। কর্মশালার প্রথম পর্বে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, রাঙ্গামাটি জেলার উপপরিচালক কৃষিবিদ পবন কুমার চাকমা রাঙ্গামাটি জেলার বর্তমান কৃষি কার্যক্রমের সামগ্রিক অবস্থা, সমস্যা, সমাধেনের উপায় এবং সম্ভাবনাসমূহের বিষয়ে পাওয়ার পয়েন্ট উপস্থাপন করেন। এসময় তিনি পার্বত্য কৃষিতে উদ্যানতাত্তি¡ক ফসলের আবাদ বৃদ্ধির উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। প্রফেসর রেজাউল করিম তালুকদার জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৮ এর লক্ষ্য, উদ্দেশ্যসমূহ এবং প্রধান প্রধান কর্মসূচীসমূহ বিস্তারিতভাবে আলোচনা করেন। কর্মশালার মুক্ত আলোচনা পর্বে অংশগ্রহনকারী সদস্যগণ পার্বত্য অঞ্চলে জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৮ সফলভাবে বাস্তবায়নে তাদের মতামত ও পরামর্শ প্রদান করেন। অতিরিক্ত সচিব (পিপিবি) মো. রুহুল আমিন তালুকদার বলেন পার্বত্য অঞ্চলে পর্যাপ্ত সমতল জমি না থাকায় মাঠ ফসল চাষের পরিধি বাড়ানোয় বিভিন্ন সীমাবদ্ধতা রয়েছে। এক্ষেত্রে পাহাড়ী ভূমিতে বিভিন্ন উদ্যানতাত্তি¡ক ফসল ও উচ্চমূল্যের ফসলের আবাদ বৃদ্ধির প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। ঝুকি কম ও অধিক লাভজনক বিধায় ক্ষতিকর তামাক আবাদের পরিবর্তে ভুট্টা চাষের উপর জোর দিতে হবে। প্রত্যন্ত এলাকার তৃণমূল কৃষকরা যাতে তাদের উৎপাদিত কৃষি পন্যের উপযুক্ত মূল্য পায় সেজন্য যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়নসহ বাজার ব্যবস্থাকে আরো শত্তিশালী করতে হবে। কৃষিবিদ মো. হামিদুর রহমান বলেন পাহাড়ের কৃষকরা জুমের পরিবর্তে লাভজনক উদ্যানতাত্তি¡ক ফসল আবাদের দিকে আগ্রহ প্রকাশ করছে যা এ এলাকার কৃষির জন্য খুবই আশাব্যঞ্জক। জাতীয় কৃষি নীতি-২০১৮ বাস্তবায়ন হলে এ এলাকার কৃষির প্রধান প্রতিবন্ধকতা যেমন শুষ্ক মৌসুমে সেচের পানির সংকট এবং পন্য বাজারজাতকরণ সমস্যা উত্তোরনে উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জিত হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। প্রধান অতিথির বক্তব্যে অতিরিক্ত সচিব(পিপিসি) ড. মো. আবদুর রৌফ বলেন পরিবর্তিত জলবায়ু পরিস্থিতিতে সামগ্রিক কৃষির উৎপাদনশীলতা ক্রমাগত বৃদ্ধি করা এখন প্রচন্ড চ্যালেঞ্জের মুখে। এ সমস্যা উত্তরনে টেকসই আধুনিক কৃষি প্রযুক্তি প্রবর্তণের কোন বিকল্প নেই। কৃষি মন্ত্রণালেয়ের প্রধান উদ্দেশই হচ্ছে কৃষিকে কৃষকের কাছে লাভজনক করা। এ উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে আইপিএম, আইসিএম, জৈব কৃষি, হাইড্রফোনিক চাষ, কৃষিতে ন্যানো প্রযুক্তি ইত্যাদি পরিক্ষীত প্রযুক্তি সমূহ প্রয়োগ এবং গবেষণা কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। সেজন্য গবেষণা এবং সম্প্রসারণ প্রতিষ্ঠান সমূহের মধ্যে সমন্বয় ও সংযোগ আরো নিবিঢ় করার ব্যাপারে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে আহব্বান জানান।
সভাপতির বক্তব্যে মো. নাসিম হায়দার বলেন দেশের সমতল এলাকার তুলনায় পার্বত্য এলাকা কৃষি এখনও পিছিয়ে আছে। তবে এ এলাকায় বেশ কিছু উচ্চমূল্যের ফসল যেমন কফি, কাজুবাদাম, গোলমরিচ, ড্রাগনফ্রুট, দারুচিনি, রাম্বুটান ইত্যাদির আবাদ বৃদ্ধির এবং তা প্রক্রিয়াজাত করে প্রচুর বৈদেশিক মূদ্রা অর্জণের সুযোগ রয়েছে। পার্বত্য এলাকায় চাষযোগ্য জমি কম হলেও সঠিক পরিকল্পনা গ্রহন করে এর সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করতে হবে। সভায় রাঙ্গামাটি অঞ্চলের কৃষি মন্ত্রনালয়াধীন বিভিন্ন দপ্তর ও সংস্থার উপজেলা, জেলা ও অঞ্চল পর্যায়ের কর্মকর্তাগন, জনপ্রতিনিধি, প্রিন্ট ও মিডিয়া ব্যক্তিত্ব, গবেষক ও উন্নয়নকর্মীগন, কৃষিপন্য ব্যবসায়ী, ব্যাংকের প্রতিনিধী, এনজিও, কৃষক/কৃষানীসহ অন্যান্যরা বিভিন্ন বিষয়ে মতামত ব্যক্ত করেন।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস