পার্বত্য জেলাগুলোতে বেল চাষে সাফল্য পেয়েছেন অনেক চাষী। পরিকল্পিতভাবে চাষাবাদ করলে এটি পাহাড়ের কৃষিজ অর্থনীতিতে নতুন মাত্র যোগ করতে পারে। বর্তমানে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানের বিভিন্ন পাহাড়ী পল্লীতে গাছের ডালে ডালে শোভা পাচ্ছে আকর্ষণীয় বেল। এসব বেল পাইকারদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে চলে যাচ্ছে। বেল চাষে আর্থিক স্বচ্ছলতার স্বপ্ন দেখছে পাহাড়ের কৃষিজীবী মানুষ। বেল চাষে অর্থ ও শ্রম বেশ কম লাগায় এবং ঝুঁকির পরিমাণ কম হওয়ায় কৃষকরা নিশ্চিত লাভের আশায় বেল চাষে আগ্রহী হচ্ছেন। খাগড়াছড়ির মাটিরাঙ্গা, দীঘিনালা, পানছড়িসহ বিস্তৃর্ণ এলাকায় বেলের চাষাবাদ হয়। বড়াদাম এলাকার বেলচাষী বিনয় চাকমার বাড়ির আঙ্গিনায় প্রায় ২০টিরও বেশি বেল গাছ আছে। যা থেকে এ মৌসুমে অর্ধ লাখ টাকার মতো আয়ের স্বপ্ন দেখছেন তিনি। পাইকাররা নগদ অর্থে চুক্তি ভিত্তিকভাবে গাছের বেল কিনে নিয়ে যায়। তাই বেল বিক্রি করতে কোন ঝামেলা পোহাতে হয় না। একই এলাকার ধর্মজ্যোতি চাকমার ঘরের পাশেই পাহাড়ী টিলা ভূমিতে রয়েছে ১০ থেকে ১৫ টির মতো বেল গাছ। গাছে ফল কাঁচা থাকা অবস্থাতেই বিক্র হয়েছে ৩০ হাজার টাকা। স্থানীয় এক পাইকার তার কাছ থেকে এসব বেল কিনেছেন। তিনি জানান, শুধু চারা কিনতেই যা খরচ। রোপণের পর থেকে আর তেমন কোন পরিচর্যা করতে হয় না বা খরচ করতে হয় না। আগামী বছর বেলের বাগান আরো বড় করার চিন্তার কথাও জানান এ প্রান্তিক চাষী। পাহাড়ী এলাকার বাজারগুলোতে প্রতি হাটবারে উঠছে বেল। গরমকালে তৃষ্ণা নিবারণে বেলের শরবত অতন্ত জনপ্রিয় বিধায় বাড়ছে বেলের চাহিদা। একাধিক পাইকারের হাত ধরে পাহাড়ের এসব বেল যাচ্ছে ঢাকা ও চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। খাগড়াছড়ির স্থানীয় পাইকার মোঃ রফিকুল ইসলাম জানান, গাছ থেকেই একটি কাঁচা বেল ৭ থেকে ৮ টাকায় আর পাকা বেল ১০ থেকে ১২ টাকা দরে কিনতে হয়। যা ঢাকায় নিয়ে বাজারজাত করা হয় দ্বিগুণেরও বেশী দামে। তাই সস্তায় বেলের খোঁজে অন্য জেলার ব্যবসায়ীদের আনাগোনা বাড়ছে খাগড়াছড়ির বিভিন্ন জনপদে।
খাগড়াছাড়ির পানছড়ির পুজগাঙ ও মাটিরাঙ্গার করল্যাছড়ির মত পাহাড়ের বিভিন্ন এলাকায় ব্যাক্তি উদ্যোগে স্বল্পপরিসরে বানিজ্যিকভাবে বেলের চাষ শুরু হয়েছে। বেল গাছ বহুবর্ষজীবি বড় ধরনের বৃক্ষ যার উচ্চতা প্রায় ১০-১৬ মিটার পর্যন্ত হয়। শীতকালে সব পাতা ঝরে যায়, আবার বসন্তে নতুন পাতা আসে। বেল শুধু সুস্বাদু ফলই নয়, এর রয়েছে নানা পুষ্টি ও ঔষুধি গুণ। বেলে প্রচুর পরিমাণে শ্বেতসার, ক্যারোটিন, ভিটামিন-বি কমপ্লেক্স, ক্যালসিয়াম ও লৌহ আছে। পাকা ফল কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে এবং কাঁচা ফল কলেরা ও আমাশয়ে উপকারী। কৃষি সম্প্রাসারণ অধিদপ্তরের সূত্রে জানা যায় বর্তমানে রাঙ্গামাটি, খাগড়াছড়ি ও বান্দরবানে প্রায় ১২৫০ থেকে ১৩০০ হেক্টর জমিতে বেলের চাষ হচ্ছে। উদ্যানতাত্তিক অন্যান্য ফসলের মত এ এলাকায় বাণিজ্যিকভাবে বেল চাষেরও প্রচুর সম্ভাবনা রয়েছে। কৃষক পর্যায়ে বেলের উন্নত জাতের চারা কলম সরবরাহ, বেল চাষের কলা কৌশল বিষয়ে প্রশিক্ষণ এবং পৃষ্ঠপোষকতা দেয়া হলে বেল চাষ সম্প্রসারিত হবে বলে আশা করা যায়।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস